|| নিজস্ব প্রতিবেদক, সুখবর পত্রিকা ||
অক্সিজেন। বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য এই উপাদানটি নিয়ে যেন রীতিমতো হাহাকার শুরু হয়েছিল করোনা মহামারীর ব্যাপক বিস্তারের সময় থেকে। মে, জুন মাসের দিকে যখন একটু অক্সিজেনের অপ্রাপ্যতার কারণে এবং অক্সিজেন সিলিন্ডারের উচ্চমূল্যের কারণে অনেক মানুষ কষ্টে ভুগছিল, ঠিক তখনই “সেবক চট্টগ্রাম” সংগঠনের কয়েকজন উদ্যমী তরুণ চিন্তা করলেন মানুষের কাছে তাৎক্ষণিক অক্সিজেন সুবিধা পৌঁছে দেয়ার। বর্তমানে তাদের এই প্রজেক্ট পুরোদমে চলছে। সাধারণ মানুষ তাদের পাশে দাড়িয়েছে, সাহায্য করেছে। তাছাড়া, এই প্রশংসনীয় উদ্যোগে সাহায্যের একটা বড় অংশ দিয়েছেন বিভিন্ন প্রবাসী শুভকাঙ্ক্ষীরা। ইতোমধ্যে সেবক চট্টগ্রাম এর ভলান্টিয়ারবৃন্দ কোভিড এবং নন কোভিড মিলিয়ে ২০ জনের অধিক রোগীর নিকট অত্যন্ত প্রয়োজনীয় মুহুর্তে জরুরী অক্সিজেন সেবা পৌঁছে দিতে পেরেছে।এখানে উল্লেখ্য, সেবক চট্টগ্রামের যাত্রা মার্চে করোনা মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকেই ত্রাণ কার্যক্রম দিয়ে শুরু হয়েছিল। তখন মূলত, “চট্টগ্রামের খেটে খাওয়া মানুষের পাশে” নামে শুরু হয় তাদের যাত্রা। মার্চ–এপ্রিলে ত্রাণ কার্যক্রমে চট্টগ্রাম শহরের এবং শহরের বাইরে প্রায় ৫৭০ এর অধিক পরিবারকে ত্রাণ উপহার দিয়ে সাহায্য করেছে তারা। যাতে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ২লক্ষ ১৭ হাজার টাকা, যার পুরোটাই এসেছিল বিভিন্ন সাধারণ মানুষের অনুদান এবং প্রত্যক্ষ সহযোগিতার মাধ্যমে।
ভলান্টিয়ারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অক্সিজেন প্রজেক্টের শুরুতে তাদের মূল চ্যালেঞ্জ ছিল অনুদান পাওয়া, কারণ করোনা মহামারীতে মানুষের অর্থনৈতিক সমস্যা বৃদ্ধি পায়। আবার, অক্সিজেন সিলিন্ডারের উচ্চমূল্য, পরিবহন, প্রথম দিকে সেবক দলের সদস্যদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সামগ্রীর ব্যবস্থা করতে না পারা বিবিধ বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে সকলের সহযোগিতায় এসব প্রতিকূলতা তারা অনেকটাই কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন এবং পুরোদমে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। কোনো রোগীর তাৎক্ষণিক সাহায্য প্রয়োজন হলে তাদের তাদের পেইজে যোগাযোগ করতে পারবেন নিচের লিংকেঃ
https://www.facebook.com/ShebokChattogram/
বর্তমানে সেবক চট্টগ্রামে মোট সদস্য আছেন ২৫ জন। এর মধ্যে রয়েছে ১২ সদস্য বিশিষ্ট একটি কার্যকরী পরিষদ, যারা শুরু থেকেই সেবামূলক কাজে নিজেদের আত্মনিয়োগ করে চলেছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন উমর খসরু সৌরভ, নাঈম ঊল হক, মাহমুদ মুসা, ইউনুচ মোস্তফা সানি, দেবাশীষ ধর, ফারহাম ইশরাক, তানভীর হাসান নিলয়, আমিনুল ইসলাম, আহসান তানভীর পিয়াল, শাখওয়াত জীবন, ইউসুফ খান রবিন, কায়কোবাদ প্রমুখ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেবক চট্টগ্রামের দুইজন প্রতিষ্ঠাতা তাদের অনুভূতি প্রকাশ করে জানান, “মানুষ করোনা মহামারীর শুরুর দিকে অক্সিজেনের অপ্রাপ্যতার কারণে মারা যাবে তা কল্পনার বাইরে ছিল। নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে বাইরে বের হয়ে রোগীর কাছে অক্সিজেন পৌঁছে দেয়াও ছিল খুবই চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু কাউকে না কাউকে তো এগিয়ে আসতে হবে। যে ডাক্তার, নার্স কিংবা সংশ্লিষ্টরা অকুতোভয়ের মতো করোনা রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তাদের দেখে আমরা মনে সাহস সঞ্চার করি। ডাক্তারদের পাশাপাশি এই কঠিন পরিস্থিতিতে সমাজে আমাদেরও কিছু দায়বদ্ধতা রয়েছে। সেই জায়গা থেকে আমরা মানুষের ক্রান্তিলগ্নে পাশে দাড়ানোর চেষ্টা করছি। সবার সহযোগিতা এবং ভালোবাসায় আমাদের প্রজেক্ট খুবই সাবলীল ভাবে চলছে। যারা আমাদের সাহায্য করেছে এবং করে যাচ্ছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং ধন্যবাদ। কাজগুলোর সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি মানুষের ভালোবাসা। আর সবার সাড়া না পেলে এই দুইটি প্রজেক্ট সফলভাবে চলত না। তাই, সবার ভালোবাসা আর আন্তরিকতায় আমরা আরো এগিয়ে যাবো। মাতৃভূমির প্রতি অভিযোগ না করে যদি সবাই সবার জায়গা থেকে সাহায্য করে এবং এগিয়ে আসে একদিন এই দেশে কোনো সমস্যা আর সমস্যাই থাকবে না।”
তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন, যতদিন করোনা মহামারী শেষ হচ্ছে না ততদিন এই অক্সিজেন প্রজেক্ট অব্যাহত থাকবে। এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের প্রত্যক্ষ সাহায্যই পারে এই প্রজেক্টকে আরো এগিয়ে নিতে। সেবক চট্টগ্রামের যাত্রা করোনাকালীন সময়ে শুরু হলেও এটির সেবামূলক কার্যক্রম পরবর্তীতেও অব্যাহত থাকবে বলে তাদের বিশ্বাস। করোনা পরবর্তী সময়ে মানুষের মৌলিক চাহিদা নিয়ে বিভিন্ন প্রজেক্টের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের, পর্যাপ্ত অনুদান ও সহযোগিতা পেলে সেই পথেও এগিয়ে যাবার ব্যাপারে আশাবাদী তারা।